শেখ রাসেল রচনা | শেখ রাসেলের জীবনী রচনা – 2023

শেখ রাসেল রচনা

ভুমিকাঃ শেখ রাসেল রচনা

বাঙ্গালীর ঘরে যুগে যুগে অনেক মহান ব্যাক্তির আবির্ভাব হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেককেই আমরা স্মমানের সাথে শ্রদ্ধা করতে পেরেছি। আবার অনেককেই হারিয়ে ফেলেছি বিস্তৃতির অতল গহ্বরে। তবে বর্তমানে আমরা বাঙ্গালি হিসেবে যে যায়গায় অবস্থান করছি এই জায়গায় অবস্থানের পেছনে তাঁদের ভুমিকা কোনো না কোনোভাবে আছেই। 

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙলির কথা বললে যে মানুষটির কথা মনে আসে তিনি হলের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে স্ব পরিবারে নির্মম ভাবে হত্যার কথা আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা আছে। স্বপরিবারে হত্যা করার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবছেয়ে ছোট ও অবুজ শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছিল। মাত্র ১১ বছর বয়সে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর কোনো অপরাধ ছিল। অপরাধ ছিল শুধু সে বঙ্গবন্ধুর সন্তান ছিল বলে।

আরো পড়ুন- কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী

শেখ রাসেলের জন্মঃ 

শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ই অক্টোবর তাঁর বড় বোন হাসিনার থাকার ঘরে জন্মগ্রহন করেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে মায়ের কোল আলোকিত করে দুনিয়াতে আসেন বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ সন্তান শেখ রাসেল। 

শেখ রাসেলের জন্মের পর সেদিন তাঁদের পুরো বাড়িই মেতে উঠেছিল আনন্দে। রাসেলের বড় বোন হাছিনা রাসেলের জন্মের পরই তাঁর ওড়না দিয়ে রাসেলের ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। রাসেলের জন্মের সময় বেশ সাস্থ্যবান ছিলেন তিনি। শেখ রাসেলের জন্মের পর শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্যই নয় বরং সমগ্র বাঙালি জাতির জন্যও আনন্দ নিয়ে এসেছিল।  

শেখ রাসেলের নামকরনঃ

শেখ রাসেলের নাম রাসেল রাখার পিছনে একটি বড় কারন ছিল। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্ব শান্তি ও সহাবস্থানের পথে। ঠিক এই কারনেই তিনি বার্ট্রান্ড রাসেলের অনেক বড় ভক্ত ছিলেন। 

বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অনেক বড় একজন নেতা। এছাড়াও তিনি একজন নোবেল বিজয়ী দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। 

আরো পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী ক্ষতির সম্মুখীন হলে তখন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে বার্ট্রান্ড রাসেল বিশেষ মুখ্য পাত্র হয়ে কাজ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এই মহান ব্যাক্তিত্বে অনুপ্রানিত হয়ে তাঁর কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রেখেছিলেন শেখ রাসেল। 

শেখ রাসেলের ছেলেবেলাঃ 

দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থার মতই বর্ণময় ছিল শেখ রাসেলের ছেলেবেলা। জন্মের পর থেকেই বাবার খুব বেশি সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়নি। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা উত্তপ্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে যায় পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে ঢাকায় রাখা হলেও পরবর্তীতে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। 

বড় বোন শেখ হাসিনার সাথে শিশু শেখ রাসেল বাবা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যায় কারাগারে। 

মাত্র দুই বছর বয়সে শিশু রাসেল তাঁর বড় বোন হাসিনাকে জিজ্ঞেস করছিল – “তমার বাবাকে আমি কি একটু বাবা বলে ডাকতে পারি?” । 

অর্থাৎ সে তাঁর বোনকে জিজ্ঞেস করছে সে তাঁর নিজের বাবাকেই বাবা বলে ডাকতে পারবে কিনা। তাঁর মানে হল তাঁর বাবা তাঁর কাছে জন্মের পর থেকেই অপরিচিত একজন মানুষ। যখন থেকে সে তাঁর বাবাকে চিনতে শুরু করে তখন তাঁর কাছে দেখা করতে গেলে আর ফিরে যেতে চাইতনা। তখন অবুঝ রাসেলকে বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে জেলই হল তাঁর বাবার বাড়ি। তাঁর বাবা সবসময় সেখানেই থাকেন। 

সামান্য কিছুদিনের জীবদ্দশায় রাসেল কাটিয়েছেন তাঁর মা ও বোনের সাথে ঢাকার ৩২ নম্বরে ও টুঙ্গিপাড়ায়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল থেকে ছোট্ট রাসেলের পড়াশোনা জীবন শুরু হয়েছিল।   

রাসেল চতুর্থ শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় মাত্র ১১ বছর বয়সে তাকে হত্যা করা হয়।

আরো পড়ুন- চিঠি লেখার নিয়ম বাংলা

শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ডঃ 

১৯৭৫ সালের অভিশপ্ত রাত ১৫ই আগস্ট সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এর রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পুর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বিপথগামি একদল সেনা কর্মকর্তা, দেশী বিদেশী বাংলাদেশ বিরোধী শত্রুর কাছে ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে জীবন দিতে হয় বঙ্গবন্ধু সহ তাঁর গোটা পরিবারকে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাস ভবনকে সেই রাতে ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই। 

ঘাতক খুনিরা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে একে এক গুলি কর হত্যা করে। 

সেই রাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ব্যাক্তিগত কর্মচারিদের সাথে শেখ রাসেলকেও নির্মম ভাবে হত্যা করে। শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাক্তিগত করমচারিদের মধ্যে একজন মহিতুল ইসলাম পরে জনান, “রাসেল দৌড়ে এসে তার কাছে জানতে চান, সেনারা তাকেও মারবে কিনা?”। ঠিক সেই সময় একজন সেনা কর্মকর্তা এসে মহিতুলকে চড় মেরে ফেলে দেন। ভয় পেয়ে রাসেল তাঁর থেকে দূরে সরে যায়। মাত্র ১১ বছরের ছোট্ট রাসেল কাঁদতে থাকে তাঁর মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। তখন একজন ঘাতক সেনা রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলে। মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে অবুঝ শেখ রাসেল। 

আরো পড়ুন- চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

কেন শেখ রাসেলের আমাদেরঃ

কেন শিশু শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু, কীভাবেইবা তিনি আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন তিনি তা বুজতে হলে ফিরে যেতে হবে তাঁর ছোট বেলার দিনগুলো লেখা বিভিন্ন ধরনের বইয়ে। 

রাসেলের ছোটবেলার দিনগুলো সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল তার বেশিরভাগ সময়ই শিশু বয়সের নিষ্পাপ আত্মভোলা কাজকর্মে পূর্ণ ছিল। 

শোনা যায় শেখ মুজিবের বাসায় একটি কুকুর ছিল টমি নামে, রাসেল তার সাথেই সবসময় খেলত। কুকুরটি একদিন জোরে ডাক দিয়ে উঠলে রাসেল মনে করে কুকুরটি তাকে বকা দিয়েছে। রাসেল তখন তাঁর বোন রেহানার কাছে এসে কেঁদে ফেলে। এছাড়াও রাসেলের মাছ ধরার শখ ছিল মারাত্মক। মাছ ধরার পর আবার সেই মাছ পুকুরেই ছেড়ে দিত ছোট রাসেল। এরকম কাজ করতে সে অনেক আনন্দ পেত।   

আরো পড়ুন- অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল উত্তর

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের জন্ম হলে ছোট্ট রাসেল তাকে নিয়ে সারাক্ষণ ছোটাছুটি করে খেলা করত। রাসেলের শৈশব খুবই দুরন্ত প্রকৃতির ছিল। আর তাঁর সাথী ছিল লাল রঙের একটি বাই সাইকেল। সে তাঁর সাইকেলে করে রোজ স্কুলে যেত। তাঁর সেই শৈশব মনে করিয়ে দেয় আমাদের শৈশবের কথা। তাঁর সেই শৈশবের গল্পে যেন নিজেদের শৈশব খুজে পাই।

খেলাধুলা, পড়াশোনা, দুরন্তপনা এসব নিয়ে শিশু রাসেল আমাদের শৈশবের আদর্শ প্রতীক হয়ে ওঠে। খুব ছোটবেলা থেকেই রাসেল বঙ্গবন্ধুর মতো মানবিকতাসম্পন্ন ছিল। মানুষ, পশুপাখি ইত্যাদি সবকিছুর জন্যই ছিল ছোট্ট রাসেলের মনে অনেক ভালোবাসা। সবার সাথে মিশত , সবার কাছে যেত, বাড়ির সবাইকে অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা করত রাসেল।

উপসংহার | শেখ রাসেলের জীবনী রচনাঃ

বাঙালি জাতির কাছে প্রিয় শেখ রাসেল হচ্ছে এক যুগোত্তীর্ণ মানব। অবুঝ থেকেও দেশের জন্য স্ব পরিবারে জীবন দিয়ে গেছেন তিনি। প্রত্যেক বাঙালি রুপকথার মত নিজ শৈশবকে খুঁজে পায় শেখ রাসেলের জীবনীর মধ্যে। আবার অন্যদিকে তাঁর নির্মম মৃত্যু আমাদের দেশের করুন বরবর সেই ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয় বারবার। মনে করিয়ে দেয় সেই ক্ষ্মতার লোভে পাগল পাষণ্ড পশুর মত লকগুলোকে যারা ১১ বছরের নিষ্পাপ শিশুকেও বাঁচতে দেয় নি, একবার কাপেনি তাঁদের হাত।  

বঙালি জাতির করুন ইতিহাসে ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল আজীবন এক জ্বলন্ত প্রতীক হয়ে থাকবে। তাঁর স্মৃতিতে বাংলাদেশ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশর পরিষদ গঠন করেছে। ঢাকার মাটিতে করা হয়েছে শেখ রাসেলের নামে একটি স্কেটিং স্টেডিয়াম। শেখ রাসেল এভাবেই বাঙালি জাতির হৃদয়ে, স্মৃতিতে ও ভালোবাসায় থাকবেন আজীবন। শেখ রাসেলের স্মৃতি বুকে নিয়ে, তাকে বন্ধুত্তের জায়গায় বসিয়ে সভ্যতার পথে এগিয়ে যাক বাঙালি জাতি। 

শেখ রাসেল রচনা pdf dowload

আরো পড়ুন- অপরিচিতা গল্পের mcq

র্বশেষঃ  

আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা শেখ রাসেল রচনা বা শেখ রাসেলের জীবনী রচনা সম্পর্কে একটা নমুনা বা পূর্ণাঙ্গ রচনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এর মাধ্যমে আমার ভাবনায় শেখ রাসেল রচনা প্রতিযোগিতা বা অন্য যেকোনো প্রতিযোগিতা অথবা পরীক্ষায় ভালো করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। 

এছাড়াও শেখ রাসেল রচনা ২০০ শব্দ এখান থেক লিখতে পারবেন। শেখ রাসেল রচনা pdf দেওয়া আছে সেখান থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। শেখ রাসেল রচনা বাংলা তে খুব ভালভাবে ও সহজ ভাসায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এখন আপনারা চাইলে এখান থেকে শেখ রাসেল রচনা ৫০০ শব্দের মধ্যে ও পড়তে পারবেন আবার শেখ রাসেল রচনা ৭০০ শব্দ ও পড়তে পারবেন। 

আর কোন তথ্য জানার থাকলে অবশ্যই কমেতে জানাবেন আর ভাল লাগলে শেয়ার করতে পারেন, ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন- পদ্মা সেতু অনুচ্ছেদ

শেখ রাসেল রচনা  শেখ রাসেলের জীবনী রচনা

 নিয়মিত পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট learn-zone এ ভিজিট করুন।

1 thought on “শেখ রাসেল রচনা | শেখ রাসেলের জীবনী রচনা – 2023”

Leave a Comment