কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী – Kazi Nazrul Islam Biography in Bangla

কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

নামকাজী কাজী নজরুল ইসলাম
জন্ম২৪ শে মে ১৮৯৯ (১৩০৬ সালের ১১ ই জ্যৈষ্ঠ)
জন্মস্থানপশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
বাবার নামকাজী ফকির আহমেদ 
মায়ের নামজাহিদা বেগম 
ডাকনামদুখু মিয়া
দাম্পত্য সঙ্গীআসালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা দেবী)নার্গিস আসার খনম
সন্তানকৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ
পেশা কবি, ঔপন্যাসিক, গীতকার, সুরকার, নাট্যকার ও সম্পাদক
উল্লেখযোগ্য কর্মচল্‌ চল্‌ চল্‌, বিদ্রোহী, নজরুলগীতি, অগ্নিবীণা, ধূমকেতু, বাঁধন হারা, বিষের বাঁশি, গজল ইত্যাদি 
আন্দোলনবাংলার নবজাগরণ
মৃত্যু ২৯ আগস্ট ১৯৬৯ (১৮৮৩ সালের ১২ ই ভাদ্র)
মৃত্যুস্থান ঢাকা, বাংলাদেশ

কাজী নজরুল ইসলাম কে ছিলেন?

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারন প্রতিভার নাম। কবিতা, নাটক, উপন্যাস ও সংগীত সহ সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রে ছিল তার অসাধারন প্রতিভার স্বাক্ষর ও অবাধ বিচরন। তিনি লিজে গান লিখতেন এবং সেই গানের সুর নিজেই দিতেন আবার নিজেই গাইতেন সেই গান। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন, এবং অধিকার আদায়ে নানা আন্দোলন করেছিলেন।

ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান ছিল বলে তাকে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। 

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম 

কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহাকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৪ শে মে (১৩০৬ সালের ১১ ই জ্যৈষ্ঠ) জন্মগ্রহণ করেন। 

কাজী নজরুল ইসলামের পিতা ও মাতা 

জাতীয় কবি কাজী নাজরুল ইসলামের পিতার নাম ছিল কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম ছিল জাহেদা বেগম। কাজী নজরুল ইসলাম এর বড় আর দুই ভাই ছিল, জন্মের কিছুদিন পরই তারা যায়। 

কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তান 

নার্গিস আসার খনমের সাথে কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম বিয়ে হয়। তার প্রথম বউ এর সাথে তিনি ঘরজামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং পরে আসালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা দেবী) কে বিয়ে করেন। 

কাজী নজরুল ইসামের চার জন সন্তান ছিল এবং তাদের নাম হল – কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ

আরো পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

কাজী নজরুল ইসলামের নাম দুখু মিয়া কেন? 

কাজী নজরুলের নাম দুখু মিয়া হওার পিছনে একটা কেরন রয়েছে। কাজী নজরুলের বড় দুই ভাই জন্মের কিছুদিন পর পরই মারা যান। 

জন্মের পর -পর তার বড় দুই ভাই মারা যাওয়ায়  জন্মের পর তার দাদী তার নাম দুখু মিয়া রাখেন। 

তিনি ছোট বেলায় এই নামেই পরিচিত ছিল এবং এটিই তার ডাকনাম। সেই দুখুমিয়াই বর্তমানের আমাদের জানা সেই বিখ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম যিনি রবীন্দ্রনাথের পর বঙ্গমহাদেশের সবথেকে বড় কবি। 

নজরুলের প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা জীবন

কাজী হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের বংশের উপাধি। তার বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মাজারেরে মতোয়াল্লি ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম ছোট বেলা থেকেই ইসলামিক চিন্তাধারা নিয়ে বেড়ে ওঠেন। 

বাল্যকালে তিনি নিকটস্থ মক্তব থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি বাংলা ও আরবি ভাষার পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ফারসি ভাষাও রপ্ত করা শুরু করেন। 

১৯০৮ সালে যখন তার বয়স মাত্র নয় বছর তখন তার বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ায় তার পরিবারে অভাব-অনটন ও দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে। এমতাবস্থায় তার পড়ালেখা বন্ধপ্রায় অবস্থা হয় এবং জীবিকার জন্য মাত্র দশ বছর বয়সে কাজে নামতে হয়। 

সেই সময় তিনি মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর তিনি লেটোর দলে যোগ দেন, লেটোর দলে বিভিন্ন পালা গান, জারি গান, মুর্শিদ গান পরিবেশন হত এবং সেখানে নজরুলের অসাধারন প্রতিভার বলে লেটো দলের প্রধান নির্বাচিত হন। লেটো দলে থাকা অবস্থায় তিনি সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যান এবং কয়েকটি কবিতা,ছড়া গান ও পালাগান রচনা করে অসামান্য দক্ষতা ও প্রতিভার প্রমান দেন। 

এরপর তিনি শিক্ষালাভের জন্য গ্রামের কয়েকজন ব্যেক্তির সহযোগিতায় রানিগঞ্জ শেয়ারশোল রাজ স্কুলে আবার ভর্তি হন।

শৈশবকাল থেকেই নজরুল একটু চঞ্চল প্রকৃতির হওয়ায় স্কুলের বাধা ধরা নিয়ম কানুন একদমই সহ্য করতে পারতেন না। তাই তিনি হঠাত একদিন স্কুল থেকে উধাও হয়ে যান।

কিন্তু কথায় জাবেন, কি খাবেন, কীভাবে চলবেন ইত্যাদি ভেবে এবং আর্থিক অভাবের কথা চিন্তা করে তিনি আসানসলের একটি রুটির দোকানে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে চাকরি নেন। 

রুটি তৈরির ফাঁকে তিনি বিভিন্ন কবিতা, গান, গজল ইত্যাদি রচনা করেন এবং বিভিন্ন বই পত্র পড়ে তাঁর ঞ্জান ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে থাকেন। তার এমন প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে এক পুলিশ ইন্সপেক্টর তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এবং ময়মনসিংহ জেলার ডালিরামপুর হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। এরপর তিনি পুনরায় রানীগঞ্জের শেয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন।

নজরুলের সেনাবাহিনীতে যোগদান

১৯১৯ সালের বিশ্ব যুদ্ধের সময় কাজী নজরুল ইসলাম ছিল ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। যুদ্ধের কারনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার পড়ালেখা আর হয়ে ওঠেনি। 

এরপর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টন রেজিমেন্টের হাবিলদার পদে প্রমোশন লাভ করেন। সৈনিক জীবনে তাকে চলে যেতে হয় পাকিস্তানের করাচিতে। 

কিন্তু সেখানে থেকেও তার কবিতা ও সাহিত্যচর্চা থেমে থাকেনি। করাচির সেনানিবাসে একজন মৌলভীর সাথে তার পরিচয় হয়। 

এরপর থেকেই তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গজল এবং সাহিত্য ইত্যাদির ব্যাপক রচনার তাগিদ অনুভব করেন।    

কাজী নজরুল ইসলাম প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তেমন পড়ালেখার সুযোগ না পেলেও তিনি তার কাব্য ও সাহিত্য চালিয়ে গেছেন। 

কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চর্চা 

১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধ থেমে গেলে পলটন রেজিমেন্ট ভেঙে

যায় এবং নজরুল নিজের মাতৃভূমি চুরুলিয়া গ্রামে ফিরে আসেন। 

এরপর তিনি একনিষ্ঠভাবে তার কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। এরপর ধীরে ধীরে দৈনিক বসুমতি, মুসলিম ভারত, মসিক প্রবাসি, বিজলী, ধুমকেতু প্রভৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে।

কাজী নজরুলের লেখা কবিতা তদানিন্তন রজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। নজরুল ব্রিটিশ বরধী স্বাধীনতান সংগ্রামের নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিতো ও বঞ্চিত মানুষের জাগরণে ছিলের একজন মহান প্রবক্তা। 

তিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯২১ সালে রচনা করেন তার বিখ্যাত অমর কবিতা “বিদ্রহী” যা তাকে বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে অমর করে রেখেছে। 

বিদ্রোহী কবিতাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

কাজী নজরুল ইসলাম অসংখ্য গান, গজল, কবিতা, সাহিত্য ও উপন্যাস রচনা করে গিয়েছেন। তার রচনাবোলির মধে উল্লেখযোগ্য হল – 

অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, দোলনচাঁপা, চক্রান্ত, প্রলয় শিখা, ভাঙ্গার গান, নতুন চাঁদ, ফনিমনসা, মৃত্যুক্ষুধা, সাম্যবাদী, সর্বহারা, রাজবন্দী, জবানবন্দি প্রভৃতি। 

নজরুল ইসলাম ফারসি ভাসার মহাকবি হাফিজের অনেকগুলো কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের অধিকাংশ কবিতা রুশ ভাসাতেও অনূদিত হয়েছিল। ইংরেজী ভাষাতেও তার অনেক কবিতা অনুবাদ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। 

বাংলাদেশে নজরুল ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান তার লেখার উপর গবেষণা চালাচ্ছে।

নজরুল ইসলামের পুরষ্কার ও সম্মাননা 

নজরুল ইসলাম ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবি “জগত্তারিনী” পুরষ্কার পেয়েছেন। 

নজরুল ইসলাম ১৯৬০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক “পদ্মভূষন” উপাধিতে ভূষিত হন।

১০৭০ সালে বিশ্বভারতী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে “ডিলিট” উপাধিতে ভূষিত করেন।

নজরুল ইসলাম ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ডিলিট” উপাধি লাভ করেন। 

নজরুল ইসলামকে ১৯৭৫ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। 

সবশেসে ১৯৭৬ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ সরকার নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং বাংলাদশের জাতিয় কবির মর্যাদা দেন।

আরো পড়ুন- পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম বাংলা

নজরুল ইসলামের অসুস্থতা, বাংলাদেশে আগমন ও মৃত্যু 

১৯৪২ সালে কি কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিরদিনের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। দেশের সব চিকিৎসা তাকে সুস্থ্য করতে অপারগ হলে সুচিকিৎসার জন্য সরকারি মাধ্যমে লন্ডনে পাঠান হয় কিন্তু সেখানেও তিনি সুস্থ্য হননি। 

 এরপর ১৯৭২ সালে তাকে বাংলাদশের রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আশা হয় এবং ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান হয়। 

অনেকদিন অসুস্থ্য থাকার পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র) বিদ্রহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম পরলোক গমন করেন। 

কবির একটি সঙ্গীতে তাকে মসজিদের পাশে কবর দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন তিনি মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পান। 

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই সঙ্গীতটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

তাই কবির ইচ্ছা অনুযায়ী কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে জাতীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ বা সমাহিত করা হয়। 

কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলামের কয়েকটি বই

মৃত্যুক্ষুধা –

অগ্নিবীণা –

বিষের বাঁশী –

কুহেলিকা –

সঞ্চিতা –

ঝিঙে ফুল –

রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম –

সাম্যবাদী –

কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী – Kazi Nazrul Islam in Biography FAQ

১। কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম কবে ও কথায়?

Ans: কাজী নজরুল ইসলাম ২৪ শে মে ১৮৯৯ (১৩০৬ সালের ১১ ই জ্যৈষ্ঠ) সালে জন্মগ্রহন করেন। 

২। কাজী নজরুল ইসলাম এর বাবার নাম কী ছিল?

Ans: কাজী নজরুল ইসলামের বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ।

৩/ কাজী নজরুল ইসলামের মায়ের নাম কী?

Ans: কাজী নজরুল ইসলামের মায়ের নাম জাহিদা বেগম।

৪/ কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতার নাম কি?

কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতার নাম ‘ বিদ্রোহী ’।

৫/ কাজী নজরুল ইসলামের কত বছর বয়সে বাবা মারা যান?

Ans: কাজী নজরুল ইসলামের মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা মারা যান

৬/ বিদ্রোহী কবিতা কত সালে প্রকাশিত হয়? 

Ans: ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি।

৭/ কাজী নজরুল ইসলামকে কোথায় কবর দেওয়া হয়?

Ans: কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবর দেওয়া হয়।

8 thoughts on “কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী – Kazi Nazrul Islam Biography in Bangla”

  1. অত্যন্ত দুঃখ পাচ্ছি। ওনার মৃত্যুর তারিখটা ঠিক করে দিন 🙏

    Reply

Leave a Comment