বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা , bongobondhu o bangladesh 2023

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা পুরোটা নিচে দেওয়া হল।

ভূমিকাঃ বিশ্বের সম্মোহনীদের মধ্যে নামের তালিকায় বঙ্গ বন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের নাম সর্বাগ্রে ও স্বগৌরবে অবস্থান করছেন। সম্মোহনীতা বলতে বুঝায় অত্যাকর্ষণজনিত কোনো এক মহিনী শক্তি। আর যুগে যুগে এই মহিনী শক্তি কোনো না কোনো ব্যক্তিত্বের মাঝে প্রকাশ পেয়ে এসেছে। আর এই মহান ব্যাক্তিদের আঙ্গুলের ইশারায় সঙ্ঘটিত হয় মহা বিপ্লব। তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। বাঙালি জাতির জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেন একে অপরের জন্যই সৃষ্টি।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়ঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯২০ সালের মার্চ মাসের ১৭ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। বঙ্গবন্ধুরা ছিলেন দুই ভাই চার বোন। পিতামাতার ছয় সন্তানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৃতীয় সন্তান। সবাই আদর করে বঙ্গবন্ধুকে খোকা বলে ডাকতেন।      

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা জীবনঃ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ১৯২৭ সালে যখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর ছিল। তখন তাকে স্থানীয় গিমাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। এরপর ১৯২৯ সালে যখন তার বয়স ৯ বছর তখন তাকে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করানো হয়।

পরবর্তীতে তিনি মিশনারী স্কুলে ভর্তি হন। এরপর ১৯৩৪ সালে তিনি একবার বেরি’বেরি নামক রোগে আক্রান্ত হলে ৪ বছর পড়ালেখার বাহিরে ছিলেন। তারপর ১৯৪২ সালে তিনি মিশনারি স্কুল থেকে মধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।

আরো পড়ুন- শেখ রাসেল রচনা

এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে থাকাকালিন সময়ে তিনি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগদান করার ফলে তার ছাত্রত্ব হারান।

রাজনৈতিক জীবন ও বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর অবদানঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অল্প বয়সেই রাজনৈতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৯৪০ সালে বঙ্গবন্ধু নিখিল ভারত মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন মুসলিম নিখিল ভারত মুসলিম ফেডারেশনে যোগ দেন। এরপর তিনি ১৯৪৩ সালে এই সংগঠন ছেড়ে বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন।। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা

১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে থাকাকালিন তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলেজ ছাত্র সংসদ এর সাধারন সম্পাদক নিরবাচিত হন। বঙ্গবন্ধু এখানেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন।  

এর ফলে এসময় তিনি নিযুক্ত হন সোহরাওয়ার্দীর সহকারী হিসেবে। ফলে প্রাদেশিক নিরবাচনে সেইবছর মুসলিম লীগের পক্ষে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষনশীল নিখিল ভারত মুসলিম ফেডারেশন এর কর্তৃত্ব খর্ব করার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ ঠা জানুয়ারী প্রতিষ্ঠা করেন “পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ” এবং সেটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হয়ে ওঠে। 

ভাষা আন্দোলনঃ ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী আইন পরিষদে প্রধান্মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে তাদের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিবে বলে ঘোষণা দিলে বঙ্গবন্ধু তৎক্ষণাৎ এর প্রতিবাদ জানান। এরপর ২ মার্চ ভাষার প্রশ্নে ফজলুল হক মুসলিম হলে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ’ গড়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে।

এরপর ১১ মার্চ হরতাল চলাকালীন সময়ে সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৫৪ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে রাজধানীর রাজপথে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাংলার ছাত্র জনতা মিছিল বের করলে সে মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়।

সে গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত ও সপিউর সহ অনেকেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জে’ল থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং একসাথে ১৩ দিন অনশন পালন করেন।। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা

আরো পড়ুন- চিঠি লেখার নিয়ম বাংলা

ছয় দফা দাবিঃ  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোর সম্মেলনে বাঙালী জাতীর ঐতিহাসিক ৬ দপা দাবী পেশ করেন।

তার এই দাবীকে ম্যাগনাকার্টাও বলা হয়ে থাকে। তার এই দাবীকে কেন্দ্র করে সেই বছর তিনি মোট ১২ বার গ্রেপ্তার হন। 

আগরতলা মামলাঃ পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে প্রধান আসামি করে ওসি এসপি সহ মোট ৩৫ জন সেনার বিরুদ্ধে আগরতলা মা’মলা দায়ের করে।

এরপর ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আগরতলা মামলার বিচারকার্য শুরু করা হয়।     

গনঅভ্যুত্থানঃ ১৯৬৯ সালে ৬ দফা দাবী ও ১১ দফা আদায়ের লক্ষ্যে ৫ জানুয়ারী ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এই পরিষদ পরবর্তীতে গন অভ্যূত্থানে রুপ নিলে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান্য আসামীদের নিঃশর্তে মুক্তি দেন।

এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সভায় শেখ মুজিবর রহমান কে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। 

বাংলাদেশ নামকরনঃ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃ’ত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব বাংলার নামকরন করেন ‘বাংলাদেশ’।

আরো পড়ুন- পদ্মা সেতু অনুচ্ছেদ

নির্বাচনী বিজয়ীঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচনে পূর্ব বাংলা জাতীয় পরিষদের ১৬২ টি আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসনেই জয়লাভ করে। এছাড়াও সংরক্ষিত ৭ টি মহিলা আসন সহ আওয়ামীলীগ মোট ১৬৭ টি আসন লাভ করে। আবার প্রাদেশিক নির্বাচনে এলাভিত্তিক আসনে ৩০০ টির মধ্যে ২৮৮ টিতে জয় লাভ করে আওামিলীগ। তারপর আবার সংরক্ষিত ১০ টি মহিলা আসন সহ মোট ১৯৮ টি আসন লাভ করে।   

১৯৭১ঃ ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওামিলীগ নিরঙ্কুশ বিজয়ী হলেও তখন পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা রকম গড়িমসি ও তালবাহানা শুরু করেন।

এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রাজধানী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি পরোক্ষভাবে সবাধীনতার ডাক দেন। হাজার হাজার মানুষের সামনে তিনি বজ্র কন্ঠে ঘোষণা দেন __ “ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ” । 

বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারা বাংলা। তার নেতৃত্বে বাঙালী জাতীর এই জাগরন দেখে ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করে ও আওামিলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবংবঙ্গবন্ধুকে গ্রে’প্তার করার নির্দেশ দেয়।

ইয়াহিয়া খানের স্বাক্ষরিত সেই ঘোষণা বার্তাটি চট্রগ্রাম প্রেরণ করা হয়। তারপর চট্রগ্রাম এর ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ২৬ ও ২৭ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলা জুড়ে তখন ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামের চেতনা।     

বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনঃ গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন হয় ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্র পতির দায়িত্ব পালন করেন।

এই সরকারের অধীনেই মুক্তিবাহিনী ও পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাস র’ক্তখয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ্য শহীদের বিনিময়ে আসে বিজয়। ১৬ ই ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখান থেকে সবাধীনতার ডাক এসেছিল সেখানেই বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় একটি নতুন ভূখণ্ড, নতুন নাম, নতুন দেশ “বাংলাদেশ”।। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা 

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনঃ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজুবর রহমান পাকিস্তানে কা’রাগারে বন্ধী ছিলেন। সেখানে তার উপর নানা নি’র্যাতন চালানো হয়। যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

এরপর ১০ জানুয়ারী ঢাকায় আসলে জতির জনক বঙ্গবন্ধুকে লাখো বাঙালী বরন করে নেয় ঢাকা বিমান বন্দরে। 

আরো পড়ুন- কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী

বঙ্গবন্ধুর হ’ত্যাকাণ্ডঃ দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যু’দ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে নতুন করে গড়ে তলার লক্ষ্যে নানা রকম প্রদক্ষেপ গ্রহন করতে থাকেন। যখন দেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলছেন তখন ঘটে আরেক বিপত্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে এক বরবর হা’মলা চালিয়ে নৃ’শংস ভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হ’ত্যা করে।

তার দুই মেয়ে শেখ রেহেনা ও শেখ হাসিনা দেশের বাহিরে থাকায় কেবল তারা দুইজনই বেঁচে যায়। 

উপসংহারঃ স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজুবর রহমান অনন্য ভূমিকা পালন করেন। তার অবদান ও ত্যাগ অনস্বীকার্য । তার অবদানের স্বীকৃতিসরূপ বাঙালী তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধী দেন। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু চিরকাল এক ও অভিন্নই থাকবে।   

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা pdf

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা pdf ডাউনলোড করতে নিচের বাটনে চাপ দিন

আপনাদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টি যত সহজে লেখা যায় তত সহজে লেখার চেস্টা করেছি। আশা করি আপনাদের পড়ে ভালো লেগেছে এবং উপকৃত হয়েছেন। চেষ্টা করেছি সকল শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা যেন পরতে পারে সেরকম সহজ করার।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মন্তব্য নিচে কমেন্টে জানিয়ে দেন, ধন্যবাদ। আপনার প্রয়োজনীয় পোস্ট পেতে আমাদের সাইট learn zone ভিজিট করে দেখতে পারেন। 

Leave a Comment