স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা pdf, সকল শ্রেনীর জন্য 2023

পদ্মা সেতু রচনা

ভূমিকাঃ আমরা প্রায় সকলেই জানি বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও উন্নয়নশীল দেশ। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে দেশি বিদেশি বিভিন্ন নদী বাংলাদেশে জালের মতো ছিটিয়ে আছে। তাছাড়া একটি দেশের মান পরিমাপ করার অন্যতম একটি মাধ্যম হল সে দেশের যোগাযোগ মাধ্যম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যোগাযোগ মাধ্যম উন্নত করতে ও নদীমাতৃক দেশ হিসেবে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া সবথেকে বড় প্রকল্প হল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো হল পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এবং এর মধ্যে মেঘনা ও যমুনা নদীর উপর আগেই সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। বাকি ছিল শুধুমাত্র পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের দক্ষিন ও দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসতে হত। তাই বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং অবশেষে তা সফল হয়। পদ্মা সেতু বিদেশী কোনো সাহায্য ছাড়াই বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে সম্পন্ন করেছে। এই সেতুর মাধ্যমে শুধ্য দক্ষিন পশ্চিম মানুষই নয় বরং সারা বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে। এই সেতু ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রই লাভবান হবে। পদ্মা সেতু রচনা

পদ্মা সেতুর বর্ণনাঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও বৃহত্তম সেতু হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু লম্বা ৬.৫ কিলোমিটার ও ২১.১০ মিটার ছওড়া। পদ্মা সেতু ২ স্তর বিশিষ্ট, স্টিল ও কংক্রিটের তৈরি এই সেতুর উপরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ বা রাস্তা এবং নিচে রয়েছে একক একটি রেলপথ। মূল পদ্মা সেতুটির পিলার সংখ্যা ৪২ টি। এর মধ্যে ২ টি পিলার রয়েছে নদীর দুই পাড়ে আর বাকি ৪০ রয়েছে নদীর মধ্যে। নদীর ভেতরের পিলার ৪০ টির মধ্যে প্রতিটিতে ৬ টি করে মোট ২৪০ টি ফাইল আছে। এবং পিলারগুলোর উপর ৪১ টি স্প্যান বসানো আছে। পদ্মা সেতুর ২ পাড়ে সড়ক তৈরি করা হয়েছে ১২ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু তদারকি করেছে বাংলাদেশের গর্বিত সেনাবাহিনী, বুয়েট ও এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড আসোসিয়েটস। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এই সেতু তৈরির কাজ করেছেন।         

পদ্মা সেতু রচনা আরো পড়ুন- পদ্মা সেতু অনুচ্ছেদ

পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যায়ঃ ২০০৭ সালে সেইসময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বাজেট নির্ধারণ করেন ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরবরতীতে ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর ব্যায় সংশোধন করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি নির্ধারণ হয়। এরপর আবার ২০১৬ সালে বাজেট পুনরায় সংশোধন করে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি নির্ধারণ করা হয়। 

পদ্মা সেতুর ইতিহাসঃ ২০০৭ সালে নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম দল আওয়ামীলীগ নির্বাচনের ইশতেহারে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তখন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নিয়ে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। এরপর ২০১১ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল এবং বিশ্ব ব্যাংক নির্মাণ কাজে আর্থিকভাবে সহযোগিতার কথা দিয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তুতির সাথে জড়িত কিছু ব্যাক্তির দুর্নীতির অভিযোগ দেখিয়ে বিশ্ব ব্যাংক আর্থিক সহায়তার কথা প্রত্যাহার করে নেয় এবং এর সাথে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ও ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর বিভিন্ন তর্ক বিতরকের পরে বাংলাদেশ সরকার তাদের নিজস্ব তহবিলের সাহায্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০২২ সালের ২৫ শে জুন সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কোটি বাঙ্গালীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

পস্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনঃ গত ২০২২ সালের ২৫ শে জুন একটি জমকালো আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এই দিনে বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় এবং এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য সন্ধ্যার পর আতশবাজি দিয়ে উদযাপন করা হয়। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে দেশী বিদেশী অতিথিদের আমন্ত্রন জানানো হয়, আবার যারা পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিরোধিতা করেছিল তাদেরো আমন্ত্রন জনানো হয়েছিল। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ সরকার উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং সারা বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশ চাইলে যেকোনো কিছুই করা সম্ভব। 

পদ্মা সেতু রচনা ভিড়িও দেখতে পারেন- এখানে ক্লিক করলেও দেখতে পারবেন।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ পদ্মা সেতু দেশের অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিন ও দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক উপকারে আসবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কোটি কোটি মানুষের সুলভ মূল্যে খাবার যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। খুব ধ্রুত হারে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। 

আরো পড়ুন- Padma Bridge Paragraph

দারিদ্র্য বিমোচনঃ দরিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু অনেক বড় ভুমিকা পালন করতে সক্ষম, বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জন্য। এই সেতুর ফলে যাতায়াত ব্যাবস্থা উন্নত হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। শিল্প ক্রখানায় বিভিন্ন কাজের চাহিদা থাকার ফলে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এছাড়াও উন্নত যাতায়াত ব্যাবস্থার ফলে বাহিরে মানুষ চাকরির সুবাদে যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে। 

যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতিঃ আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়া বা নিউজে দেখি যে পাটুরিয়া, মাওয়া, জাজিরাঘাটে সহ অনেক জায়গায় বিভিন্ন বাস, ট্রাক ঘন্টায় ঘণ্টায় দাড়িয়ে থাকে। এর ফলে মানুষের অনেক ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুর সুবাদে কম সময়ে কম টাকায় যাতায়াত করা যাবে। এছাড়াও নিচে রেললাইন সংযোগের ফলে আরো ধ্রুত যোগাযোগ সম্ভব। 

কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নঃ বাংলাদেশের দক্ষিন-পসচিমাঞ্চল কৃষি খাতে বেশ উন্নত। এই অঞ্চলে বেশ ভালো কৃষি কাজ হলেও বিভিন্ন সময়ে যাতায়াত এর কারনে অনেক সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়। যার ফলে কৃষকরা মাঝে মাঝে কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু পদ্মা সেতুর ফলে মানুষের সময় ও ব্যয় দুটিই কমে যাবে ফলে এই সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে। 

বৈশ্বিক পরিচিতিঃ বাংলাদেশের সবথেকে বড় বা বৃহত্তম সেতু হল পদ্মা সেতু। বিশ্বের প্রথম ১০ টি সেতুর মধ্যে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর নাম আসবে। বাংলাদেশের নিজের অর্থায়নে করা এই পদ্মা সেতুর ঋণ নিয়েও বিশ্বব্যাংকের সাথে আলোচনা সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। সঠিক ও সুন্দর ভাবে বর্তমান সরকার থাকাকালীন অবস্থায় পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার সফলতার পরিচয় পাচ্ছে সারা বিশ্বে। সফলতার এই ধারা বাংলাশের অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

পদ্মা সেতুর নেতিবাচক প্রভাবঃ পদ্মা সেতুর ইতিবাচক দিক সব দিক দিয়ে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক দিক ও রয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের ফেরিঘাটের লোকদের কাজের চাহিদা কমে যাবে। লঞ্চ, স্টিমার সহ ফেরি মালিকদের ব্যাবসার ক্ষেত্রে খারাফ প্রবাভ ফেলবে। সেতুর দুই পাশে নতুন নতুন শহর গড়ে উঠলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আশেপাশের মানুষের মানুষের কর্মসংস্থনের লোপ পাওয়ার প্রবনতা বেড়ে যাবে। তবে আশা করি বাংলাদেশ সরকার তাদের বিকল্প ব্যাবস্থার কথা বিবেচনা করেবে। 

আরো পড়ুন- শেখ রাসেল রচনা

উপসংহারঃ পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্ন। এই সপ্ন ২০২২ সালের ২৫ শে জুন উদ্বোধনের মাধ্যমে পুরন হয়েছে বাঙালির। এই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাবহার হবে। এটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্ব রাখবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে এটি অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্নের নাম, যা পাল্টে দিবে অর্থনীতির চাকা।  

 পদ্মা সেতু রচনা pdf

এই রচনাটি pdf ডাউনলোড করতে চাইলে নিচের বাটনে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

পদ্মা সেতু রচনা
পদ্মা সেতু রচনা

পদ্মা সেতু রচনা আরো পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

পদ্মা সেতু রচনা আরো পড়ুন- চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

পদ্মা সেতু রচনা আরো পড়ুন- অপরিচিতা গল্পের mcq 

পদ্মা সেতু রচনা আরো পড়ুন- কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী 

পদ্মা সেতু রচনা আরো পড়ুন- অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

আপনাদের জন্য পদ্মা সেতু রচনা পুরোটি লিখেছি। পদ্মা সেতু রচনা এর যে পয়েন্টগুলো লিখেছি সেগুলো লিখতে পারলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবেন। নিচে আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানিইয়ে দিন।

4 thoughts on “স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা pdf, সকল শ্রেনীর জন্য 2023”

  1. Hi there, I discovered your web site via Google whilst
    looking for a comparable subject, your site came up, it appears great.
    I have bookmarked it in my google bookmarks.
    Hi there, just changed into alert to your blog thru Google, and found that it’s truly informative.
    I’m gonna watch out for brussels. I’ll be grateful when you continue this in future.
    Many other people will likely be benefited from your writing.
    Cheers!

    Reply

Leave a Comment